33 C
dhaka
বুধবার, ৩১শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২২
দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায় :  সতর্কতা এবং সচেতনতা

জোনাকী দত্তঃ
যে কোন সময় আমাদের জ্বর হতে পারে। তবে সব জ্বর ভয়ংকর নয়। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশা এই ভাইরাস বহন করে বিধায় ঐ মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হলো শরীরে শীত শীত ভাব অনুভব করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, নিচের পিঠে ব্যথা, পেশি ব্যথা, ফুসকুড়ি, ক্লান্তি, ত্বক, চোখ লাল হওয়া ও জ্বর খুব দ্রুত বেড়ে যাওয়া। এ সময় হৃৎস্পন্দন হার ও রক্তচাপ কম থাকে। কখনো কখনো ডেঙ্গু সংক্রমণ খুব মারাত্মক অথবা প্রাণনাশক হয়ে থাকে এটাকে বলে সিভিয়ার ডেঙ্গু। সিভিয়ার ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তকরণ, শ্বাস নেওয়া কষ্টকর, চেতন হারানো ইত্যাদি।সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি আছে। সেগুলো হলো এ, বি, সি। ‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীদের শুধু জ্বর থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে বিশ্রাম নিলে হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ভালো। তাদের পেটে ব্যথা, বমি, মাথা ব্যথা দেখা যায়। ‘সি’ ক্যাটাগরির রোগীদের আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ থাকে। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোগীর প্লাটিলেট কমে গেলে রোগী মৃত্যুবরণ করে। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের হার প্রতি ১০০ মিলি লিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ। এই পরিমাপের চেয়ে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি দেখা দেয়। ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোন প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তকরণ হতে পারে। মিষ্টি কুমড়া, লেবুর রস, আমলকি, এ্যালোভেরা, ডালিম ফল খেলে রোগীর প্লাটিলেট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ সময় দই, কাঠবাদাম, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালং শাক, আদা, রসুন, হলুদ, নিম পাতার রস,পেয়ারার শরবত ইত্যাদি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ডেঙ্গু রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, ফলের জুস, তরল জাতীয় খাবার খাওয়াই উচিত। জ্বর হলে তা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০ টির অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। প্রতিবছর ৫ থেকে ৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়। এবং তাদের মধ্যে ১০-২০ হাজারের মতো মারা যায়। ১৭৭৯ সালে ডেঙ্গুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে ডেঙ্গু ভাইরাসের উৎস ও সংক্রমণ বিশদভাবে জানা যায়।বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব  দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬৬ জন। তার মধ্যে ১৫০ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ও ১১৬ জন বাইরে ভর্তি করা হয়েছে। রাজধানীতে ১,৯২৩ জনসহ মোট ৩,২৫২ জন ডেঙ্গু রোগী এখন সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়।২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে বহু মানুষ প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ঝুঁকির মাত্রাটা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে সারা বছরই ঝুঁকি থাকে। এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সংক্রমিত মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এজন্য মশা বংশবৃদ্ধির সম্ভাব্য সব জায়গাগুলো ধ্বংস করতে হবে। কোথাও পানি জমতে না দেওয়া, ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করা, সন্ধ্যার আগে জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেওয়া, বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। ডেঙ্গু রোগের ঔষধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। তবে মশক নিধনই বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন ও সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন...

এই গরমে আরামের পোশাক

ওয়েব ডেস্ক

সিলেটের বিপক্ষে হেসেখেলেই জিতল রংপুর

অনলাইন ডেস্ক

গ্রীষ্মের গরমের আগেই সঠিক যত্নে প্রস্তুত রাখুন এসি

ওয়েব ডেস্ক